ঢাকা,শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪

ভারত থেকে আসা রোহিঙ্গারা ঠাঁই পাচ্ছে ক্যাম্পে

নিউজ ডেস্ক ::

ভারত থেকে আসা একশ রোহিঙ্গা পরিবার ঠাঁই পাচ্ছে কক্সবাজারের ক্যাম্পে। টেকনাফের হোয়াইক্যং চাকমারকুল ওমান রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে তাদের জন্য আলাদা ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। গত কয়েকদিনে ভারত থেকে আসা রোহিঙ্গাদের ৭২ পরিবারের ৪৩২ জনকে ইতিমধ্যে সেই ক্যাম্পে স্থানান্তর করা হয়েছে। বাকিদের শনিবার স্থানান্তর করার কথা রয়েছে। বিভিন্নভাবে ভারত থেকে আসা এসব রোহিঙ্গারা এতদিন উখিয়ার ট্রানজিট ক্যাম্পে অবস্থান করেছিল।

স্থানীয় সূত্র জানায়, গত বুধবার ট্রানজিট ক্যাম্প থেকে ৭২টি রোহিঙ্গা পরিবারকে হোয়াইক্যংয়ের ওমান রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। এই ক্যাম্পে ভারত থেকে পালিয়ে আসা আরও ২৮টি রোহিঙ্গা পরিবারকে বসবাসের জায়গা করে দেয়া হবে। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ‘ইউএনএইচসিআর’ এসব রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পে প্রেরণের কাজ তদারকি করছে।

ক্যাম্প সূত্র জানায়, হোয়াইক্যং ওমান রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভারত থেকে আসা একশত রোহিঙ্গা পরিবারকে স্থানান্তর করা হবে। পূর্ববর্তী ৭২ পরিবারের সঙ্গে বাকি ২৮ রোহিঙ্গা পরিবারকে শনিবার ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়ার কথা রয়েছে।

ভারত থেকে আসা রোহিঙ্গা সলিম উল্লাহ বলেন, আমরা ভারতের হায়দ্রাবাদে রোহিঙ্গা শিবিরে থাকতাম। সেখানে মিয়ানমার সরকারের সহযোগিতায় ভারতীয় কর্তৃপক্ষ আমাদের জোরপূর্বক প্রত্যাবাসনের মাধ্যমে ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ড (এনভিসি) নিতে বাধ্য করছে। ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ডে (এনভিসি) রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিক নয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তাই আমরা জোরপূর্বক প্রত্যাবাসিত হয়ে এনভিসি কার্ড নিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে ভারত ছেড়ে পালিয়ে আসি।

একই কথা বলেছেন জম্মু-কাশ্মীর থেকে আসা রোহিঙ্গা নারী খুরশিদা। তিনি বলেন, আমরা দীর্ঘ আট বছর ভারতের জম্মু কাশ্মীরে ছিলাম। সেখানে আমাদের মতো আরও তিন হাজারের বেশি রোহিঙ্গা পরিবার শরণার্থী হিসেবে বাস করছে। অনেক পরিবারকে ভারত সরকার জোর করে মিয়ানমারে পাঠিয়ে দেয় এবং মিয়ানমার সরকার তাদের ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ড (এনভিসি) নিতে বাধ্য করে। তাই আমরা উদ্বিগ্ন ছিলাম। নাগরিকত্ব না নিয়ে মিয়ানমারে ফিরে যাওয়া আমাদের জন্য সুখকর হবে না। তাই আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে চলে আসি।

খুরশিদা বলেন, বাংলাদেশের সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে ঢুকে অনেক কষ্টে কক্সবাজার পর্যন্ত পৌঁছেছি। এখানে প্রথমে আমাদের ট্রানজিট পয়েন্টে রাখা হয়েছিল। শনিবার আমাদেরকে ক্যাম্পে নেয়ার কথা রয়েছে।

ট্রানজিট পয়েন্টে ভারত থেকে আসা আরও শতাধিক পরিবার থাকতে পারে উল্লেখ করে হোয়াইক্যং ইউনিয়নের বাসিন্দা আব্দুর রহমান বলেন, অধিকাংশ রোহিঙ্গা নিজেদের সুবিধা আদায় করতে মিথ্যাচার করে। তাই পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ভাষ্য বাদ দিয়ে খতিয়ে দেখা দরকার ভারতে থাকা রোহিঙ্গাদের এদেশে নিয়ে আসতে কোনো সংস্থা বা গোষ্ঠী তৎপরতা চালাচ্ছে কি-না। যোগাযোগ না থাকলে হঠাৎ ভারতে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে পালিয়ে আসার সাহস পাওয়ার কথা নয়।

স্থানীয় রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকার বাসিন্দা শাহীন শাহ বলেন, পৃথিবীর সব রোহিঙ্গার নিরাপদ আশ্রয়স্থলে পরিণত হচ্ছে বাংলাদেশের উখিয়া-টেকনাফ। এটাই রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনস্থল হিসেবে ধরে নিচ্ছে তারা। রোহিঙ্গা এবং ক্যাম্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত দেশি ও বিদেশি সংস্থার কার্যকলাপে ধারণা করছি রোহিঙ্গারা এদেশে যুগ যুগ ধরে থাকার স্বপ্ন দেখছে বা দেখানো হচ্ছে। এমনটি হয়ে থাকলে তা স্থানীয়দের জন্য কতটুকু নিরাপদ?

জানা গেছে, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও উগ্রপন্থী রাখাইনদের নির্যাতনের মুখে রাখাইন থেকে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ ও ভারতে আশ্রয় নিয়েছে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা। সর্বশেষ ২০১৭ সালের আগস্টের পর ওই রাজ্য থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা নারী পুরুষ। আগে পালিয়ে আসাসহ বাংলাদেশে রোহিঙ্গার সংখ্যা এখন ১১ লাখের বেশি।

teknaf-rohinga

এবার ভারত থেকে মিয়ানমারে ফেরত ও নানা আতঙ্কে বাংলাদেশে আসতে শুরু করেছে দেশটিতে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা। মিয়ানমার ফেরত পাঠানোর ভয়ে ভারত ছাড়ছেন তারা। বিনাবাধায় ঢুকে পড়ছেন বাংলাদেশে। প্রায় দুই মাসে ৩০০ রোহিঙ্গা পরিবারের প্রায় দেড় হাজার রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ বাংলাদেশে ঢুকেছেন। কয়েকদিন ধরে ইউএনচিআরের তত্ত্বাবধানে কক্সবাজারের উখিয়া ট্রানজিট পয়েন্টের আশ্রয় শিবিরে রাখা হয় তাদের। সেখান থেকে অবশেষে তাদের টেকনাফ উপজেলার চাকমারকূলে অস্থায়ী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে জায়গা করে দিয়েছে প্রশাসন। পর্যায়ক্রমে সব রোহিঙ্গাদের অস্থায়ী শরণার্থী ক্যাম্পে স্থানান্তর করা হবে।

কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয় সূত্র মতে, গত দুই মাসে ভারত থেকে পালিয়ে ৩০০ রোহিঙ্গা পরিবারের ১ হাজার ৩০০ জন সদস্য বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। ভারত থেকে স্বদেশে (মিয়ানমার) ফেরত পাঠানোর ভয়েই মূলত তারা ভারত ছেড়ে বাংলাদেশে আসছে বলে দাবি করছে। গত বছরের মে থেকে কিছু কিছু রোহিঙ্গা ভারত থেকে আসছিল। এর মধ্যে গত ডিসেম্বর ও চলতি মাসে ভারত থেকে পালিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ১ হাজার ৩০০ রোহিঙ্গা এসেছে। তাদের কক্সবাজারের উখিয়ার অন্তবর্তকালীন ট্রানজিট পয়েন্টের আশ্রয় শিবিরে জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনএইচসিআর’র তত্তাবধানে রাখা হয়েছে। ২৩ জানুয়ারি বিকেলে ৭২ পরিবার এবং শনিবার আরও ২৮ পরিবারকে ট্রানজিট ক্যাম্প থেকে টেকনাফের অস্থায়ী রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে স্থানান্তর করা হবে।

কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. আবুল কালাম বলেন, ভারত থেকে কিছু রোহিঙ্গা উখিয়া-টেকনাফ এসেছে। তারা বরাবরের মতো ইউএনএইচসিআর’র তত্ত্বাবধানে রয়েছে। ট্রানজিট পয়েন্টে রেখে তাদের এখানে রাখার আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে চাকমারকুল শরণার্থী শিবিরে নেয়া হচ্ছে। এদের সঠিক সংখ্যা জানতে কিছু অপেক্ষা করতে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

চাকমারকুল ক্যাম্পের ইনচার্জ মাহবুবুল আলম জানান, ভারত থেকে আসা শতাধিক রোহিঙ্গা পরিবারকে তার নিয়ন্ত্রণাধীন ক্যাম্পে সংযুক্ত করা হচ্ছে।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক কক্সবাজার মো. কামাল হোসেন বলেন, ইতিমধ্যে ১১ লাখ রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে এসে উখিয়া-টেকনাফে আশ্রয় নিয়েছে। সম্প্রতি হাজারের অধিক রোহিঙ্গা ভারত থেকে এসে ইউএনএসসিআর’র তত্ত্বাবধানে রয়েছে বলে জেনেছি। যেহেতু একবার মানবতা দেখানো হয়েছে সেহেতু নতুন আসাদেরও অন্যান্য শরণার্থীদের মতো বিভিন্ন ক্যাম্প সংযুক্ত করে রাখা হচ্ছে।

পাঠকের মতামত: